আইয়ুব বাচ্চুর জীবন কাহিনী - Ayub Bachchu Life Story



আইয়ুব বাচ্চুর জীবন কাহিনী - Ayub Bachchu Life Story



বাংলাদেশের সংগীত জগতের একজন কিংবদন্তী শিল্পির নাম আইয়ুব বাচ্চু । তিনি ছিলেন একাধারে একজন গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার, ও চলচ্চিত্র প্লেব্যাক শিল্পী । এল আর বি ব্যান্ড দলের লিড গিটারবাদক এবং ভোকাল বাচ্চু ছিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত জগতের জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন।[] এর পূর্বে তিনি দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সাথে লিড গিটারবাদক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরী ও নকীব খানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালে সঙ্গীতজগতে তার যাত্রা শুরু ব্যন্ডদল ফিলিংসের মাধ্যমে । তিনি তার শ্রোতা-ভক্তদের কাছে এবি (AB) নামেও পরিচিত। তার ডাক নাম রবিন। মূলত রক ধাঁচের কণ্ঠের অধিকারী হলেও আধুনিক, ক্লাসিকাল সংগীত এবং লোকগীতি গেয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধতায় ভাসিয়েছেন ‘এবি’।

আইয়ুব বাচ্চু ১৬ আগস্ট ১৯৬২ সালে চট্রগ্রাম শহরের একটি একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । শৈশবে বাচ্চু খুব দুষ্টু প্রকৃতির ছিলেন কিন্তু পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান ছাত্র । ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হবেন । তিনি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন । ছেলে বেলায় গান শুনতে শুনতে নিজে চেষ্টা করতে গিয়েই তার গায়ক হয়ে ওঠা। পশ্চিমা সংগীতের প্রেমে পড়ে হাত দেন গিটারে। জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুরের মত শিল্পীদের কাজ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা।
সত্তরের দশকে গিটার বাজাতে শুরু করেন বাচ্চু এবং অচিরেই গিটারে দক্ষ হয়ে ওঠেন। কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের নিয়ে বাচ্চু গড়ে তোলেন একটি ব্যান্ডদল। শুরুতে ‘গোল্ডেন বয়েজ’ নাম দিলেও পরে বদলে রাখা হয় ‘আগলি বয়েজ’। পাড়া মহল্লার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে চলত তাদের পরিবেশনা।
সঙ্গীতজীবন:

আয়ুব বাচ্চু ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে তার সঙ্গীত জীবনের যাত্রা শুরু করেন। ব্যান্ড দলে ‘ফিলিংস’ এর সঙ্গে সে সময় চট্টগ্রামের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে পারফর্ম করতেন তিনি। তার কন্ঠ দেয়া প্রথম গান "হারানো বিকেলের গল্প"। গানটির কথা লিখেছিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। পরবর্তীতে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত হন ১৯৮০ সালে । ১৯৮৬ সালে বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম 'রক্তগোলাপ' বের হয়, যেটি তেমন সাফল্য পায় নি। এরপর ১৯৮৮ সালে বাচ্চুর দ্বিতীয় একক ময়না প্রকাশ পায় এবং এই অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি সংগীত জগতে ব্যাপক সাড়া ফেলেন এবং এ্যালবামটি দারুন জনপ্রিয় হয় ।

টানা ১০ বছর সোলসের লিড গিটার বাজানোর পর ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চু গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড এলআরবি। শুরুতে এলআরবির পুরো নামটি ছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’, পরে তা বদলে নাম হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’।

ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম ব্যান্ড অ্যালবাম এবং বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম 'এল আর বি' প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে । এই অ্যালবামের "শেষ চিঠি কেমন এমন চিঠি", "ঘুম ভাঙ্গা শহরে", "হকার" গানগুলো ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর তার দ্বিতীয় অ্যালবাম সুখ ১৯৯৩ সালে এবং ১৯৯৪ সালে তৃতীয় এ্যালবাম তবুও বের হয়। সুখ অ্যালবামের "সুখ, "চলো বদলে যাই", "রূপালি গিটার", "গতকাল রাতে" উল্লেখযোগ্য গান। "চলো বদলে যাই" বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা লিখেছেন ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই। এছাড়া তার তৃতীয় একক অ্যালবামটি ছিলো 'কষ্ট' যা ১৯৯৫ রিলিজ হয় । সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে "কষ্ট কাকে বলে", "কষ্ট পেতে ভালোবাসি", "অবাক হৃদয়", "আমিও মানুষ"। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহরে প্রকাশিত হয়। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন। "অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে" বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তাঁর গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।

পরবর্তীতে তার একক অ্যালবাম 'বলিনি কখনো' প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে, এবং ২০১১ সালে এল আর বি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম 'যুদ্ধ'। এবং এরপর দীঘ বিরতী নিয়ে ছয় বছর পর বাজারে আসে তার পরবর্তী একক অ্যালবাম 'জীবনের গল্প' ২০১৫ সালে ।
গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুনভাবে অণুপ্রাণিত। বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন। তিনি ২০১০ সালে ঈদের জন্য নির্মিত ট্রাফিক সিগন্যাল ও হলুদ বাতি শিরোনামের নাটকে ও অভিনয় করেন ।

এই কিংবদন্তী সংগীত শিল্পির বেশিরভাগ গানই নিজেই লেখা এবং সুর করা । আইয়ুব বাচ্চু নিজেকে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন প্রথমত একজন গিটারিস্ট হিসেবে। তারপর গায়ক। সত্তরের দশক থেকে বাংলাদেশে শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড-রক, ব্লুজ, অল্টারনেটিভ রক, ব্যান্ড মিউজিক - এসব জগতের পরিচয় হতে থাকে তাঁর গানের মধ্য দিয়ে।

এই গুনী শিল্পির উল্লেখ যোগ্য ব্যান্ড অ্যালবাম হলো, এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২)

উল্লেখ যোগ্য একক অ্যালবাম হলো, রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনও (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এছাড়াও তার গাওয়া গানের অসংখ্য মিক্স অ্যালবাম রয়েছে।

বাচ্চুর বহুল জনপ্রিয় কিছু গান হলো, (অ্যালবাম) : চলো বদলে যাই, চাঁদ মামা, এখন অনেক রাত, ফেরারী মন, তারা ভরা রাতে, বেলা শেষে, ঘুমন্ত শহরে, ঘুম ভাঙা শহরে, ভুলে যাও, আমি প্রেমে পড়িনি, সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, মন চাইলে মন পাবে, চোখের জলের কোনো রঙ হয় না, শুনতে কি পাও, হাসতে দেখ’সহ আরও অনেক।

এছাড়াও জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের গান হলো : ‘সাগরিকা’ ছবির ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘ব্যাচেলর’ ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘লাল বাদশা’ ছবির ‘আরো আগে কেন তুমি এলে না’, ‘তেজী’ ছবিতে ‘এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন’, ‘আম্মাজান’ ছবির ‘আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘মেয়েরা মাস্তান’ ছবিতে ‘ঘড়ির কাঁটা থেমে থাক’, ‘চোরাবালি’ ছবিতে ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ শিরোনামের গান।

আইয়ুর বাচ্চু ফেরদৌস আইয়ুব চনদনা’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এই দম্পতির দুটি সন্তন রয়েছে । ছেলে তাজওয়ার যিনি বর্তমানে কানডায় পড়াশোনা করছেন এবং মেয়ে ফইরোজ যিনি অষ্ট্রেলিয়া বসবাস করেন ।

কোটি দর্শককে কাদিয়ে বাংলাদেশ ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পী ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পীর জীবনাবসানে শোকের ছায়া নেমেছে শোবিজ অঙ্গনে। এমন আরেক জন আইয়ুব বাচ্চু আর আসবে না কিন্তু থেকে যাবে তার রেখে যাওয়া সৃষ্টি ওমর হয়ে......এইগুনি শিল্পির বিদেহী আত্বারমাগফেরাত কামনা করছি ।



ডাক নাম : রবিন

জন্ম : ১৬ আগস্ট, ১৯৬২

জন্মস্থান : চট্টগ্রাম

শৈশব ও কৈশোর : চট্টগ্রাম

মৃত্যু : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ঢাকা

পারিবারিক জীবন : স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে

সঙ্গীত জীবন শুরু : ১৯৭৭

প্রথম গান : হারানো বিকেলের গল্প

প্রথম ব্যান্ড : ফিলিংস (১৯৭৮)

দ্বিতীয় ব্যান্ড : সোলস

নিজের ব্যান্ড : এলআরবি (১৯৯১)

প্রথম একক অ্যালবাম : রক্তগোলাপ (১৯৮৬)

এলআরবি’র প্রথম অ্যালবাম : এলআরবি (১৯৯২)

চলচ্চিত্রে প্রথম গান : অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে (লুটতরাজ)

ব্যান্ড অ্যালবাম : এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারী মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮), যুদ্ধ (২০১২)

একক অ্যালবাম : রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনও (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এছাড়াও তার গাওয়া গানের অসংখ্য মিক্স অ্যালবাম রয়েছে।

জনপ্রিয় গান (অ্যালবাম) : চলো বদলে যাই, চাঁদ মামা, এখন অনেক রাত, ফেরারী মন, তারা ভরা রাতে, বেলা শেষে, ঘুমন্ত শহরে, ঘুম ভাঙা শহরে, ভুলে যাও, আমি প্রেমে পড়িনি, সেই তুমি, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, মন চাইলে মন পাবে, চোখের জলের কোনো রঙ হয় না, শুনতে কি পাও, হাসতে দেখ’সহ আরও অনেক।

জনপ্রিয় গান (চলচ্চিত্র) : ‘সাগরিকা’ ছবির ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘ব্যাচেলর’ ছবির ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘লাল বাদশা’ ছবির ‘আরো আগে কেন তুমি এলে না’, ‘তেজী’ ছবিতে ‘এই জগৎ সংসারে তুমি এমনই একজন’, ‘আম্মাজান’ ছবির ‘আম্মাজান’, ‘স্বামী আর স্ত্রী’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘মেয়েরা মাস্তান’ ছবিতে ‘ঘড়ির কাঁটা থেমে থাক’, ‘চোরাবালি’ ছবিতে ‘ভুলে গেছি জুতোটার ফিতেটাও বাঁধতে’ শিরোনামের গান।

সর্বশেষ কনসার্ট : ১৬ অক্টোবর ২০১৮ (রংপুর)


ভিডিওটি ভাল লাগলে অবশ্যই একটা লাইক দিবেন কারন এটাই হলো আমার অনুপ্রেরনা....এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন । পরবর্তীতে কার জীবন কাহিনী দেখতে চান তা কমেন্টে জানাবেন । সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ