Bangladeshi Popular Actress Nusrat Imrose Tisha Biography
নুসরাত ইমরোজ তিশা বাংলাদেশের চলচিত্র এবং টেলিভিশানের তুমুল জনপ্রিয় একজন মডেল ও অভিনেত্রী । ১৯৯৮ সালে টিভি নাটকের মাধ্যমে তিনি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন তবে মাত্র ৯ বছর বয়সেই গান দিয়েই শুরু হয়েছিল তিশার পথচলা । খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি এদেশের সকল শ্রেণীর দর্শকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন তার প্রানবন্ত নিখুঁত অভিনয়মানের জন্য । বর্তমানে তিশা টিভি পর্দায় নিয়মিত মডেলিং এবং অভিনয়ের পাশাপাশি চলচিত্রে অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এবং তার সফলতা আকাশ ছোয়া ।
নুসরাত ইমরোজ তিশা ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ সালে রাজশাহী বিভাগের এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন । তার বয়স ৩২ বছর, উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, ওজন ৫৩ কেজি, ধর্ম: ইসলাম এবং তার রাশি হলো : মীন রাশি ।
তিশার বাবা এনামুল হক এবং মা শাহীন মাহফুজা । বাবা মা আর ১ ভাই নিয়ে তিশার পরিবার । জন্ম রাজশাহীতে হলেও তিশার বেড়ে ওঠা ঢাকতেই । তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে মিডিয়া এবং কমিউনিকেশান ভিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন । এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী ২০১০ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রিয় টিভি ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ভালবেসে বিয়ে করেন । ২০০৫ সাল থেকে তাদের এই প্রনয় যাত্রা শুরু হয় এবং ৫ বছর পর বিয়েতে গড়ায়, দীর্ঘ ৯ বছরের সংসারজীবনে তারাখুবই সুখী দম্পতি ।
মা বাবার ইচ্ছাতেই শৈশব থেকেই মিডিয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তিশার । বাবাকে প্রচন্ত রকম ভালবাসতেন তিনি, বাবার সাথে তার খুবই বনধুর মত সম্পর্ক ছিল এবং বাবার অনুপ্রেরনার কারনেই একটা সময় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন পারফর্মিং মিডিয়ায় কাজ করার। ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পাওয়া তিশার মিডিয়া জগতে পদার্পণ টেলিভিশনের মাধ্যমেই। উল্লেখ্যযে শিশুশিল্পী হিসেবে মূলত তিশা গান করতেন। তিশা এঞ্জেল ফোর নামের একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন এবং তার বাবা মারা যাবার পর তিনি দলটি বন্ধ করেদেন । ১৯৯৭ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে অনন্ত হীরার সাতপেড়ে কাব্য নামের নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে শখের বশে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পদার্পণ করেন। প্রথম নাটকেই সকলের নজরে আসেন তিনি এবং একই বছর ফিরে দেখা, গৃহ গল্প এবং স্বপ্ন যাত্রা নামের আরও তিনটি নাটকে কাজ করেন । এসকল নাটকে অভিনয়ের পর তিশার অভিনয়ের প্রতি একটা অন্য রকম টান চলে আসে এবং নিজেকে একজন প্রতিষ্টিত অভিনেত্রী হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় দানা বাধতে শুরু করে ।
তাই তো তিশার বয়স যখন১৭ বছর তখন তিনি, মেরিল লিপজেলের টিভিসিতে প্রথম কাজ করেন এস এ ইয়ং মডেল অভিনেত্রী হিসাবে । টিভিসিটি বেশ প্রসংশিত হয় এবং এর ধারাবাহিকতায়, কোকাকোলা ,সিটিসেল, বোম্বে সুইটস এবং কেয়া কসমেটিকস এর টিভিসিতেও দেখাযায় তাকে । এই সকল টিভিসির সাফল্যের কারনে তিনি অভিনয় ও মডেলিংয়ে প্ররোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখনই। এই অভিনেত্রী ২০০৪ সালে একটানা ১৪টি নাটকে কাজ করেন।নিষ্পাপ চেহারার লাবন্যময়ী সুন্দরী এই অভিনেত্রী তার চমৎকার অভিনয় গুনের কারনে ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে সেরা মডেল অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন । ২০০৫ সালে এই অভিনেত্রী মিডিয়া থেকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নেন । এর সঠিক কারন জানা জায়নি তবে অনেকে বলে থাকেন পরিচালক মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর সাথে তার প্রেমে জড়ানোর কারনই ছিল প্রধান । আবার অনেকে বলে থাকেন চলচিত্রে অভিনয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করতে এই বিরতি নিয়েছিলেন তিনি । টানা ৫ বছর বিরতির পর তিশা ২০০৯ সালে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি পরিচালিত “ থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার” চলচিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে কামবেক করেন । ছবিটি সুপারহিট হয় এবং এর জন্য তিনি শ্রেষ্ট চলচিত্র অভিনেত্রী ক্যাটাগরিতে মেরিল প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার লাভ করেন । ২০১০ সালে একাধারে চারটি নাটকে অভিনয় করেন এবং ঐ বছরই বিখ্যাত পরিচালক তারেক মাসুদের “রানওয়ে” চলচিত্রে অভিনয় করেন । ২০১০ সালে তিনি টিভি নাটক গ্র্যাজুয়েট এবং ২০১১ সালে “তামিনার দিনযাপন” নাটকের জন্য সেরা টেলিভিশান অভিনেত্রী ক্যাটগরিতে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তিশা চলচিত্রে অভিনয়ের তিকে বেশি মনযোগী হন এবং এর ফলে ২০১২ সালে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকি পরিচালিত “ টেলিভিশান এবং ২০১৩ সালে “ডুবোশহর” চলচিত্রে অভিনয় করেন । ২০১২ সালে তিনি টিভি নাটক “লংমাচ” এবং ২০১৩ সালে “যদি ভালনালাগে দিয়োনামন-২” নাটকের জন্য সেরা টেলিভিশান অভিনেত্রী ক্যাটগরিতে মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন । এরপর ২০১৬ সালে সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত “ প্রেম করে আমি মরবো” শামীম আহমেদ রনি পরিচালিত “মেন্টাল” এবং অনন্য মামুনের “অস্থিত্ব” চলচিত্রে অভিনয় করেন । এর মধ্যে শকিব খানের বিপরীতে বানিজ্যিক ধারার মেন্টাল তেমন ব্যবসাসফল না হলেও আরেফিন শুভর বিপরীতে “অস্থিত্ব” চলচিত্রটি ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয়তা পায় ।
২০১৭ সালে অভিনয় করেন মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর বহুল আলোচিত “ডুব” চলচিত্রে , যেখানে তিনি বলিউড সুপারস্টার ইরফান খানের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন । এই ছবিটি ব্যাপক দর্শক জনপ্রিয় হয় এবং এই চলচিত্রটি পৃথিবীর সব বড় বড় বিখ্যাত ১৫টিও বেশি ফ্লিম ফ্যাস্টিভ্যালে অংশ গ্রহন করে । আরও খবর হলো এই ছবিটি ভারতের ফ্লিম ফেয়ার এ্যাওয়ার্ড পশ্চিমাঞ্চল এ পাচটি ক্যাটাগরিতে নমিনেশান পায় । একই বছর তৌকির আহমেদ পরিচালিত “হালদা” চলচিত্রেও অভিনয় করেন এই গুনী অভিনেত্রী । ২০১৮ সালে তিশা কাজ করছেন মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর “শনিবার বিকেল” তৌকির আহমেদের “ফাগুন হাওয়া” এবং তাহের শিপন ও মুকুল রায় চৌধুরীর বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার ‘হলুদবনি” চলচিত্রে যাতে তার বিপরীতে দেখা যাবে কলকাতার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কে। এছাড়াও কাজ করছেন আরেকটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা “এপার ওপার”এ ।
খুব ভাল স্ক্রিপ দেখে বেছে বেছে টেলিভিশান নাটক এবং চলচিত্রে সমান তালে কাজ করছেন তিশা তবে ইদানিং চলচিত্রে কাজের চাপ অনেকে বেড়েছে । এই গুনী অভিনেত্রী এখন পর্যন্ত প্রায় ১২০ টির ও আধিক নাটক টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন এবং ১১ টি ব্যবসাসফল হিট সুপরহিট ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের এবং হাতে রয়েছে আরও অনেকগুলো ছবির কাজ ।
তার উল্লেখ যোগ্য কিছু এক-পর্বের নাটক হলো ,নুরুল হুদা একদা ভালবেসেছিল, অরন্যে জ্যোৎস্না, পূর্ণ দৈর্ঘ্য, ক্যারাম প্রথম পত্র, ক্যারাম দ্বিতীয় পত্র, আজকের দেবদাস, বৃষ্টি অথবা কান্না, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম, দুরের মানুষ, একুশের চিঠি, ফিরে আসো সুন্দরিতমা, লেট নাইট শো, নিলাঞ্জনা, পূর্ণদৈর্ঘ্য বাঙ্গলা নাটক, তিন পৃথিবীর মানুষ, তবুও বসন্ত, ভালবাসার উল্টো পিঠ, নাটক ৪২০, গ্র্যাজুয়েট, বাবার হোটেল, মুকিম ব্রাদার্স ইত্যাদি এবং সিরিজ নাটকের মধ্যে আরমান ভাই, আরমান ভাই কয়া পারছে, আরমান ভাই ফাইস্যা গেছে,আরমান ভাই বিরাট টেনশনে, আরমান ভাই দি জেন্টেলম্যান, আরমান ভাই হানিমুনে, সিকান্দার বক্সের হাওয়াই গাড়ি ইত্যাদি ।
মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার ছাড়াও তিশা, CZFV পুরস্কারপ্রাপ্ত (২০০৪-২০০৫),চ্যানেল আই -এর দুবাই পুরস্কার,এনটিভি -এর লন্ডন পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে ৭ম এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন পুরস্কার পান।এত পুরস্কার প্রাপ্তির পরও জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারটি স্বপ্নই রয়েগেছে তিশার তবে তার মতে তিনি পুরস্কারের জন্য অভিনয় করেন না, তার এই পথ চলা শুধুমাত্র তার ভক্ত-দর্শকদের ভালবাসার জন্য ।
এই টেলেনটেড অভিনেত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচিত, এখন পর্যন্ত ফেইসবুকে প্রায় ১৪ লক্ষ ৬৪ হাজরের অধিক লোক এবং টুইটারে ৫৯ হাজারেরও অধিক লোক তাকে ফলো করেন । তিশার নাটক প্রতি পারিশ্রমিক হলো ৩০ থেকে ১ লক্ষ টাকা এবং প্রতিটি ছবির জন্য প্রারিশ্রমিক নেন ৫ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা । বাস্তব জীবনে তিশা খুবই চটপটে বাকপটু একটা মিশুক মেয়ে যার কনভিন্স করার দারুন একটা ক্ষমতা রয়েছে ।
নুসরাত ইমরোজ তিশাতার অপরুপ সুন্দর চেহারা এবং দুর্দান্ত অভিনয় মানের জন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন এবং কোটি দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। লাইফ স্টোরি বাঙলার পক্ষ থেকে তার উজ্জল ভবিষ্যত সাফল্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি ।
নুসরাত ইমরোজ তিশা এর ফেসবুক প্রোফাইল: https://www.facebook.com/TishaBDactressOfficial
তিশার ইস্টাগ্রাম প্রোফাইল লিংক: https://twitter.com/actress_tisha
তিশার ইউকিপিডিয়া লিংক: https://goo.gl/Z6MPkA
0 মন্তব্যসমূহ