Suchotia Biography | Life Story Bangla | নায়িকা সুচরিতা এর জীবন কাহিনী | সুচরিতার জীবনী
Baby Helen is a former Bangladeshi film actress. As an actress, she got breakthrough in the film Jadur Bashi. She won the Bangladesh National Film Award for Best Actress in 1993 for her role in the film Hangor Nodi Grenade.
‘ও আমার রসিয়া বন্ধুরে, তুমি কেন কোমরের বিছা হইলা না’ ‘সমাধি’ ছবির এই গানের সঙ্গে রুপালি পর্দায় নেচে উঠলেন একটি ছিপছিপে আনকোড়া মেয়ে, কিন্তু তার রূপের ঝলক আর অভিনয়ের ধার দর্শক-নির্মাতাকে মোহবিষ্ট করে ফেলে মুহূর্তেই। এই হলো শিশু শিল্পী বেবী হেলেন থেকে অভিনেত্রী সুচরিতার চলচ্চিত্র জীবনের গল্পের শুরু।
অভিনয় শুরুর গল্প
সুচরিতার বড় বোন বেবী রিটা ষাটের দশক থেকেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৬৬ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘কাগজের নৌকা’ চলচ্চিত্রেও বেবী রিটা অভিনয় করেছিলেন। বড় বোনের শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন সুচরিতা (তখনো অবশ্য তার নাম সুচরিতা হয়নি) এবং তারই বান্ধবী চম্পা। সেখানেই প্রখ্যাত পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমানের ‘কুলি’ চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান সুচরিতা। তখন সুচরিতার নাম ছিল হেলেন। ‘কুলি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর তিনি শিশু চরিত্রে আরও অভিনয় করেন ‘নিমাই সন্ন্যাসী’, ‘অবাঞ্ছিত’, ‘রং বেরং’, ‘টাকা আনা পাই’, কত যে মিনতি’, ‘রাজ মুকুট’, ‘বাবলু’সহ আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে। নায়িকা হিসেবে তার অভিনয়ের শুরুটা হয় ১৯৭২ সালে আজিজুর রহমানের নির্দেশনায় ‘স্বীকৃতি’ ছবিতে।
ছবিটি তাকে তেমন কোনো পরিচিতি এনে দিতে পারেনি। ১৯৭৬ সালে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক ও গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজনায় এলেন, নির্মাণ করার উদ্যোগ নিলেন ‘সমাধি’ ছবিটি। এ ছবির জন্য নায়ক হিসেবে নায়ক রাজ রাজ্জাককে চূড়ান্ত করলেন তিনি। এবার নায়িকার পালা। যেহেতু তখন রাজ্জাক-কবরী জুটি দর্শক ক্রেজে পরিণত হয়েছে তাই কবরীকে নায়িকা হিসেবে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত নিলেন প্রযোজক। কিন্তু তখন রাজ্জাক ও কবরীর মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। তাই রাজ্জাক এবং কবরী একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হলেন না। অন্য নায়িকাদেরও শিডিউল পাওয়া যাচ্ছিল না। মহা বিপদে পড়লেন প্রযোজক গাজী মাজহার। এমন সময় একজন শিল্প নির্দেশক এসে প্রযোজককে হেলেনের কথা বললেন, তাকে নিয়ে আসা হলো। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথায়, দেখলাম ছোটখাটো একটি ছিপছিপে মেয়ে, আমার পছন্দ হলো না। হতাশ হলাম। পরদিন সেই শিল্প নির্দেশক আবার মেয়েটিকে সাজিয়ে গুছিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্যাড পরিয়ে নিয়ে এলেন।
এবার তাকে দেখে নায়িকা হিসেবে আমার মনে ধরল। বুঝতেই পারলাম না যে এটি আগের দিনের আনা সেই মেয়েটি। তার মধ্যে বলিউডের নায়িকা নার্গিসের ছায়া দেখতে পেলাম। ব্যস, সমাধির জন্য নায়িকা হিসেবে চূড়ান্ত করে ফেললাম হেলেনকে। তার নাম পরিবর্তন করে ফিল্মি নাম রাখলাম ‘সুচরিতা’। দীলিপ বিশ্বাস পরিচালনা করলেন ‘সমাধি’ ছবিটি। ছবিটি মুক্তির পর সুচরিতার অভিনয়ে দর্শক মুগ্ধ। নির্মাতারাও তাকে দেখে নড়েচড়ে বসলেন। এই ছবিতে তার লিপসিংয়ে ‘ও আমার রসিয়া বন্ধুরে তুমি কেনো কোমরের বিছা হইলা না’ গানটি আজো দর্শকের মুখে ফিরে। মানে নায়িকা হিসেবে সুচরিতা হিট। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর অশোক ঘোষের ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও দর্শকপ্রিয়তা পান এই নায়িকা। ১৯৭৭ সালে আসে চলচ্চিত্রে তার মজবুত অবস্থান তৈরির মাহেন্দ্রক্ষণ। এই বছর নামি চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চু সুচরিতা আর অপু নামে এক মেডিকেলে পড়া কিশোরকে জুটি করে নির্মাণ করলেন কিশোর-কিশোরী প্রেমের ছবি ‘যাদুর বাঁশি’। ছবিটি মুক্তির পর সুচরিতা হয়ে ওঠেন নায়িকা হিসেবে বড় পর্দার ঝড়। ছবির ভাঁজে ভাঁজে নায়িকা হিসেবে সুচরিতা যে গ্লামার ছড়িয়ে দিলেন তাতে একদিকে তার মেধার পরিচয় অন্যদিকে এ কারণেই ‘যাদুর বাঁশি’ হয়ে যায় কালজয়ী ছবি। এই ছবিতে সুচরিতার লিপসিংয়ের গান ‘যাদু বিনা বাঁশি বাজিতে পারে না’ জাতীয় পুরস্কারসহ আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর ছবিটি ঢাকাই চলচ্চিত্রে এখনো সফল ছবির ইতিহাস হয়ে আছে। সেই যে শুরু হলো নায়িকা হিসেবে সুচরিতার সফল যাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এ অভিনেত্রী।
সুচরিতার সাত সতেরো
বেবী হেলেনের জন্ম ১৯৫৮ সালে ঢাকায়। চাষী নজরুল ইসলামের হাঙর নদী গ্রেনেড ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। চলচ্চিত্রের দুটি মানুষ তার ভীষণ প্রিয় বলে জানান সুচরিতা। একজন নায়করাজ রাজ্জাক। অন্যজন ববিতা। সুচরিতা বলেন, ববিতা আপা একজন খাঁটি মানুষ। তার বাসার পাশেই লেকভিউ হাসপাতালে আমার প্রথম সন্তান আবির যখন হলো, তখন যতদিন হাসপাতালে ছিলাম ততদিন তার বাসা থেকে তিন বেলার খাবার পাঠাতেন। তিনিও আসতেন আমার খোঁজখবর নিতে। আরও ভালোলাগার বিষয় হলো ববিতা আপার
সন্তান অনীকের কাপড়ই আমার সন্তান আবির প্রথম পরেছে। সিঙ্গাপুরের মাদার কেয়ার থেকে আনা সেই কাপড় প্রথম অনীক পরেছে, তারপর আমার সন্তান। প্রথম মা হওয়ার সময় ববিতা আপার সঙ্গে সেই সব স্মৃতি কোনো দিনই ভোলার নয়। সত্যিই তিনি একজন মহান নারী। সুচরিতার নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘বজ্রমুষ্ঠি’র ‘জীবনে একজন প্রিয়জন সবারই প্রয়োজন’, ‘আঁখি মিলন’ চলচ্চিত্রের ‘আমার গরুর গাড়িতে’ এবং ‘যাদুর বাঁশি’ চলচ্চিত্রের ‘আকাশ বীণা চাঁদ’ গান তিনটি ভীষণ প্রিয়। সুচরিতা প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ১৯৭৭ সালে। ১৯৭৬ সালে দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’ ছবিতে অভিনয় করার সময় এই ছবির ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা জসিমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর পরিণয়। কিন্তু জসিম-সুচরিতার সংসার টিকে ছিল মাত্র তিন বছর। এরপর সুচরিতা দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ১৯৮৯ সালে। চলচ্চিত্র ব্যবসায়ী ও ঢাকার কয়েকটি সিনেমা হলের মালিক কেএমআর মঞ্জুর সঙ্গে সুচরিতার এই বিয়েটিও ছিল প্রেমের। তাদের সংসারে পর পর আসে ৩টি সন্তান। সন্তান আর সংসারের ব্যস্ততায় সুচরিতা একসময় ঢালিউড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। কিন্তু ২৩ বছরের মাথায় এই দাম্পত্য জীবনেরও ইতি ঘটে। কলহ বিবাদের মধ্য দিয়ে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন এই দম্পতি। মায়াময় ফটোজেনিক চেহারা আর আকর্ষণীয় দেহবল্লরী তাকে শক্ত ভিত গড়ে দেয় ঢালিউডে। আশির দশক পর্যন্ত তিনি ছিলেন দেশের প্রথম সারির নায়িকা। দুই হাজার সালের প্রথম দিকে আবার অভিনয়ে ফিরেন তিনি। বর্তমানে মা-খালার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করতে বেশি দেখা যায় তাকে।
0 মন্তব্যসমূহ